ছদাহার ঐতিয়্য


চট্টগ্রাম জেলা শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সুপরিচিত ও হালের বিখ্যাত জনপদ ছদাহা। সমৃদ্ধ ইতিহাস আর ঐতিহ্যে ভরপুর ছদাহার উত্তরে কেঁওচিয়া, দক্ষিণে পদুয়া, পূর্বে বাজালিয়া ও বান্দরবান পশ্চিমে সাতকানিয়া সদর ও ঢেমশা।
সময়ের ধর্মীয় জ্ঞান চর্চার বিখ্যাত তীর্থস্থান ছদাহার ১১.৩১ বর্গমাইল আয়তনের জায়গায় বর্তমানে ৬ হাজার পরিবারের ২৭ হাজার জনগোষ্ঠীর বসবাস।
ছদাহার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভৌগোলিক অবস্থান দেখলে মনে হয় কোন চিত্রশিল্পীর নিখুঁত হাতে তৈরি এই ছদাহা। যে দিকে তাকায় সেদিকে তাঁর রূপময় স্নিগ্ধতা চোখে পড়ে। ছদাহার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মাঝেমধ্যে কল্পনার জগত কেও হার মানায়। কী নেই আমাদের ছদাহায়?
এই ছদাহায় রয়েছে নীলাচল, নীলগিরির মতো সুউচ্চ পাহাড়ের বুকে হেলান দিয়ে বসে থাকা ছোট ছোট পাহাড়ে সবুজের সমারোহ, হাঙ্গর বিধৌত উর্বর পলিমাটি, রয়েছে খাল - বিল, রয়েছে অসংখ্য ঝিরি - শৈলকুপার মতো দৃষ্টিনন্দন ঝরণা, রয়েছে অসংখ্য প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম পাহাড়ি লেকের অপূর্ব সমন্বয়, রয়েছে সবুজ গালিচার মতো বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত্র। যেখানে অচেনা পথিকের চেনা গাঁয়ের মতো হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে বনবীথির ভেতরে অজানা গন্তব্যে।
ছদাহার বুক চিরে চলে গেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত আরাকান সড়ক । যাঁর মধ্য দিয়ে কাকডাকা ভোর থেকে হরণ বাজিয়ে দিব্যি ছুটে চলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রংবাহারি গাড়ি ও যাত্রী। ছদাহায় বর্তমানে গড়ে উঠছে দক্ষ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক রেস্তোরাঁ। যেখানে শত শত ভ্রমণপিয়াসীরা যাত্রাবিরতিতে ছদাহার রূপ-রসের গন্ধ গায়ে মেখে নেন। একসময় ছদাহায় যাত্রীদের শুধু চোখ পড়তো এখন ক্যাফের কল্যাণে পা ও পড়ে। যা আমাদের কে তুলে ধরছে দেশের নানা অঞ্চলের মানুষের কাছে। ইট পাথরের শহরে যখন পাশে থাকা মানুষের মোবাইলে অপর প্রান্ত থেকে শোনা যায় যাত্রাবিরতিতে গাড়ি সাতকানিয়ার টাইম ক্যাফে দাঁড়িয়েছে তখন বুক টা ভরে যায়। এই বুঝি আমার প্রিয় ছদাহা!!! আবার অজানা আশংকায় চিন্তা ও হয় অতিথির ঠিকমতো আপ্যায়ন হচ্ছে তো?
ছদাহার পাশে রয়েছে বিজিবির একমাত্র ট্রেনিং সেন্টার বাইতুল ইজ্জত। যেখানে আধাসামরিক প্রশিক্ষণার্থীদের সাবধান হও, উল্টো ঘুরবে আর গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে শান্তিপ্রিয় ছদাহা বাসীর। যা আমাদের পরিচয় কে যেমন তুলে ধরছে তেমনি নিরাপত্তা ও সুসংহত করছে।
ছদাহার হাঙ্গর খালের দুই তীরে চোখে পড়ে শুভ্র কাশফুলের অপূর্ব সমারোহ। হয়তো, সে শুভ্র কাশফুলের ছোঁয়া নিয়ে আপন মনে তীর বেয়ে হারিয়ে যায় দুরন্ত পল্লীমেয়ে চাঁদনী। ছদাহার বিলে ঝিলে ফুটে নাম না জানা বাহারি ফুল ও শাপলা। যে ফুল খোঁপায় বেঁধে বউ বউ খেলা করতে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামায় দুরন্তপনা কিশোরীর দল। ছদাহার ছোটবড়ো ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠা হ্যাচারীতে অসংখ্য নৌকা চোখে পড়ে। যা দিয়ে নিজের অজান্তে হারিয়ে যাওয়া যায় প্রকৃতি ও পানির মাঝে।
ছদাহা যেন বৈচিত্র্যময় মনোলোভা সৌন্দর্যের খনি। ছদাহার রৌদ্রভাজা দিনদুপুর, স্নিগ্ধ জোৎস্নাময় রাত, দিগন্তজোড়া ছায়াঘন বন - বনানী, বিস্তীর্ণ সবুজ ধানক্ষেতের সবুজ ঢেউয়ের হাসির চিত্র প্রিয়ার কাছে চিঠির লিখার প্রিয় মুহূর্ত ও স্থান। এই ছদাহায় প্রকৃতির সাথে মিতালী করে আপন মনে প্রিয়ার কাছে চিঠি লেখা যায়। বিশেষ করে বহনা মুড়ার খামারবাড়ি ও পূর্ব ছদাহার শৈলকুপায়। ছদাহার প্রকৃতি হতে পারে চাঁদের সোনালি আভা গায়ে মাখার অন্যন্য স্থান। মহিলা মাদ্রাসার ব্রিজে হালে কতনা মধ্যরাত্রি জোছনার জলে পার করেছি দক্ষিণা সমীরণের সাথে তাল মিলিয়ে। ছদাহার প্রকৃতি অন্যন্য। যা উদাস ক্লান্ত পথিকের প্রাণ মন মুহূর্তে সুখানুভূতির মধ্যে ডুবিয়ে দিতে পারে।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিখ্যাত বেগুন ছদাইয়্যা বেগুনের উৎস এই ছদাহায়। ছদাহায় ফলে তরমুজ, বাঙ্গি সহ মৌসুমী ও শীতকালীন সব সবজি। যে সবজি কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম পাইকারি কাঁচাবাজার শিশুতলা বাজার।
ছদাহার সবুজে - শ্যামলে, সুজলা -সুফলা, শস্য শ্যামল প্রকৃতি হাতছানি দিয়ে ডাকে যে কোন প্রকৃতি প্রেমীদের। প্রকৃতি প্রেমীরা মন ভরে উপভোগ করে এর সৌন্দর্য, মেটায় অন্তরের তৃষ্ণা।
No comments